রবার্ট ক্লাইভ ছিলেন ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সেনাপতি এবং ব্রিটিশ উপনিবেশবাদী। তিনি ভারত উপমহাদেশে ইংরেজ সাম্রাজ্যবাদের সূচনা করেন। তার উপাধি ছিল পলাশীর প্রথম ব্যারন। পলাশীর যুদ্ধে তার নেতৃত্বে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সেনাদল বাংলার নবাব সিরাজউদ্দৌলার সৈন্যদলকে পরাজিত করে।
রবার্ট ক্লাইভ উপমহাদেশের প্রথম ইংরেজ গভর্নর। ক্লাইভ দিল্লির সম্রাট শাহ আলমের সাথে এলাহাবাদে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেন। বাৎসরিক মাত্র ২৬ লক্ষ টাকার বিনিময়ে দেওয়ানি প্রদান করেন। এই চুক্তির ফলে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলা, বিহার, উড়িষ্যার দেওয়ানি লাভ করে।
দিল্লির সম্রাট শাহ আলমের নিকট দেওয়ানি লাভের পর বাংলার নবাবী শাসন ধূলিসাৎ হয়।
নবাবকে বৃত্তিভোগীতে পরিণত করে রবার্ট ক্লাইভ দ্বৈত শাসন প্রবর্তন করেন ১৭৬৫ সালে।
দ্বৈত শাসন ব্যবস্থায় বাংলার নবাবের উপর শাসন ও বিচার বিভাগের দায়িত্ব অর্পণ করা হয়।
ক্লাইভ রাজস্ব আদায় ও প্রতিরক্ষার দায়িত্ব ন্যস্ত করেন কোম্পানির উপর।
দ্বৈত শাসন ব্যবস্থার মারাত্মক পরিণতি হল ছিয়াত্তরের মন্বস্তর।
ছিয়াত্তরের মন্বন্তরের সময় বাংলার গভর্নর ছিলেন লর্ড কার্টিয়ার।
ছিয়াত্তরের মন্বন্তরের (১১৭৬ বঙ্গাব্দ) বা ১৭৭০ খ্রিস্টাব্দঃ
দ্বৈত শাসনের আওতায় রাজস্ব আদায়ের দায়িত্ব পেয়ে ইংরেজরা প্রজাদের উপর অতিরিক্ত কর আদারে অত্যাচার শুরু করে। অতিরিক্ত করের চাপে যখন জনগণ ও কৃষকের নাভিশ্বাস ওঠার অবস্থা একই সময়ে তিন বছর অনাবৃষ্টির ফলে খরায় ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়। নেমে আসে দুর্ভিক্ষের করাল গ্রাস। দুর্ভিক্ষে লক্ষ লক্ষ লোক অনাহারে মারা গেলেও কোম্পানি করের বোঝা কমানোর কোন পদক্ষেপ নেয়নি। এই দুর্ভিক্ষে বাংলার প্রায় এক তৃতীয়াংশ (এক কোটি) লোকের মৃত্যু হয়। ইতিহাসে এটি ছিয়াত্তরের মন্বন্তর নামে পরিচিত।
দ্বৈত শাসন ব্যবস্থায় ইংরেজ কোম্পানির অত্যাচার নিপীড়নের বিভিন্ন দিক ব্রিটিশ পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হলে ইংল্যান্ডে দ্বৈত শাসনের বিরুদ্ধে তুমুল তর্ক-বিতর্ক শুরু হয়। এজন্য ব্রিটিশ পার্লামেন্টের সুপারিশক্রমে ভারত শাসন সংক্রান্ত রেগুলেটিং অ্যাক্ট, ১৭৭৩ কার্যকর করা হয়। এর ফলে কোম্পানির গভর্নরের পদ গভর্নর জেনারেল পদে উন্নীত হয় ।
তেতাল্লিশের দুর্ভিক্ষ(১৯৪৩)/পঞ্চাশের মন্বন্তর(১৩৫০) এর সময় ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ছিলেন উইনস্টন চার্চিল। ১৯৪০ সালের ঘূর্ণিঝড় এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জাপান ১৯৪২ সালে বার্মা (মায়ানমার) দখল করলে চাল আমদানির পথ বন্ধ হয়ে যায়।
সমসাময়ীক গ্রন্থঃ মধুশ্রী মুখোপাধ্যায়ের Churchill's Secret War, বিভূতিভূণের উপন্যাসঃ "অসনি সংকেত'। চলচিত্রঃ সত্যজিৎ রায়ের 'অসনি সংকেত' (১৯৭৩), মৃণাল সেনের 'আকালের সন্ধানে' (১৯৭০)। চিত্রকর্মঃ জয়নুল আবেদীনের 'ম্যাডোনা-৪৩'।